কেন আমরা “Two-State Solution”-এর বিরোধী?

two-state solution

“দুই রাষ্ট্র সমাধান” বর্জন করুন।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত আজ কয়েক দশক ধরে চলমান। এই দীর্ঘস্থায়ী সংকট সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক মহল বহুবার “দুই রাষ্ট্র সমাধান” (Two-State Solution) প্রস্তাব করেছে। অর্থাৎ, ইসরায়েলের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। প্রথম দৃষ্টিতে এটি ন্যায়সঙ্গত ও বাস্তবসম্মত মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা হলো— “দুই রাষ্ট্র সমাধান” কার্যকর নয় এবং এটি সমস্যার স্থায়ী সমাধান আনতে সক্ষম নয়।

আমরা কেন এই সমাধানের বিরোধিতা করি, তার কয়েকটি মূল কারণ নিচে তুলে ধরা হলো।


১. ইতিহাস ও ন্যায্যতার প্রশ্ন

ফিলিস্তিনি ভূমি ঐতিহাসিকভাবে আরব জনগণের। শতাব্দীর পর শতাব্দী তারা এই ভূখণ্ডে বসবাস করেছে। কিন্তু ১৯৪৮ সালের পর থেকে ইসরায়েল ক্রমাগত দখলদারিত্ব বিস্তার করেছে। এখন “দুই রাষ্ট্র সমাধান” বলতে গেলে ফিলিস্তিনিদের সেই দখলকে বৈধতা দেওয়া হয়।

একটি ন্যায়সঙ্গত সমাধান কখনোই দখলদারকে পুরস্কৃত করতে পারে না। যদি একটি রাষ্ট্র অবৈধভাবে ভূমি দখল করে, তবে সমাধান হলো দখলদারিত্বের অবসান, নতুন রাষ্ট্র উপহার দেওয়া নয়।


২. ফিলিস্তিনের রাষ্ট্র গঠনের বাস্তব শর্ত নেই

যদি ধরেও নেওয়া হয় যে “দুই রাষ্ট্র সমাধান” কার্যকর হবে, তবুও প্রশ্ন থাকে— সেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্র কোথায় হবে?

  • পশ্চিম তীর ইতিমধ্যেই ইসরায়েলি বসতিতে ভরা।
  • গাজা অবরুদ্ধ এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
  • জেরুজালেমকে ইসরায়েল নিজেদের রাজধানী ঘোষণা করেছে।

এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের জন্য একটি বাস্তব রাষ্ট্র গঠনের কোনো ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক অবকাঠামোই অবশিষ্ট নেই।


৩. অসম শক্তির সমীকরণ

ইসরায়েলের রয়েছে আধুনিক সেনাবাহিনী, পারমাণবিক অস্ত্র, অর্থনৈতিক শক্তি এবং পশ্চিমা বিশ্বের পূর্ণ সমর্থন। অন্যদিকে ফিলিস্তিন আজও শরণার্থী, অবরোধ এবং দারিদ্র্যের মধ্যে রয়েছে।

এই অসম পরিস্থিতিতে “দুই রাষ্ট্র সমাধান” ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা নয়, বরং তাদের পরাধীনতাকে দীর্ঘস্থায়ী করবে। কারণ, নতুন রাষ্ট্র গঠিত হলেও তা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকবে।


৪. ন্যায়বিচার ছাড়া শান্তি অসম্ভব

যারা “দুই রাষ্ট্র সমাধান”-এর পক্ষে, তারা মূলত একটি “রাজনৈতিক সমঝোতা” চান। কিন্তু প্রশ্ন হলো— ন্যায়বিচার ছাড়া কোনো শান্তি কি স্থায়ী হতে পারে?

যে মানুষরা নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হলো, যারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম শরণার্থী শিবিরে বাস করছে, যারা প্রতিদিন দমন ও হত্যা সহ্য করছে— তাদের জন্য কেবল একটি “অর্ধেক রাষ্ট্র” কোনো সমাধান হতে পারে না। প্রকৃত সমাধান হলো দখলদারিত্বের অবসান এবং ফিলিস্তিনিদের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা।


৫. দুই রাষ্ট্র নয়, একটি ন্যায়সঙ্গত রাষ্ট্র

আমরা বিশ্বাস করি, সমাধান “দুই রাষ্ট্রে” নয়, বরং একটি ন্যায়সঙ্গত রাষ্ট্রে, যেখানে ইহুদি ও আরব উভয়েই সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে।

  • সেখানে থাকবে না দখলদারিত্ব।
  • থাকবে না ভৌগোলিক বিভাজন।
  • থাকবে না শরণার্থী হওয়ার অভিশাপ।

বরং একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকলেই সমান অধিকার ভোগ করবে। এটাই দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী শান্তি আনতে পারে।


উপসংহার

“দুই রাষ্ট্র সমাধান” শুনতে যতই আকর্ষণীয় লাগুক, বাস্তবে এটি ন্যায়বিচারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এটি দখলদারিত্বকে বৈধতা দেয় এবং ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে ক্ষুদ্র করে ফেলে।

তাই আমরা বিশ্বাস করি— প্রকৃত সমাধান হলো দখলদারিত্বের অবসান, শরণার্থীদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, এবং একটি ন্যায়সঙ্গত, অভিন্ন রাষ্ট্র যেখানে সবার সমান অধিকার থাকবে।

ন্যায়বিচার ছাড়া শান্তি আসে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *